RCS Chat Explained: RCS নিয়ে যা যা জানা দরকার

একটা ব্যাপার কি আমরা লক্ষ্য করেছি? সেই বাটন ফোন থেকে শুরু করে স্মার্টফোনেও এখন পর্যন্ত ফোনের ডিফল্ট অ্যাপ্লিক্যাশনের  SMS( এবং MMS) নিয়ে খুব বেশি কাজ অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে আশানুরুপ আপগ্রেডেশন করা হয়নি। সেই মান্ধাতা যুগের প্রটোকলই এখনও ব্যবহার হয়ে আসছে যা প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৯২ সালে। অর্থাৎ প্রতিটি SMS হতে হয় নির্দিষ্ট ডাটা সাইজের যাতে আবার রয়েছে যাতে রয়েছে আবার ক্যারাক্টার লিমিট(160)। অন্যদিকে IP(Internet Protocol) ভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপগুলো(Whatsapp, Telegram etc) সময়ের ব্যবধানে যোজন যোজন এগিয়ে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টি নিয়ে বড় দুই টেক জায়ান্ট Apple এবং Google প্রায় এক দশকের ধরে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে iMessage নিয়ে Apple এখন মোটামুটি একটা স্ট্যাবল অবস্থায় গেলেও Google এখনও দোদুল্যমান। গত ১০ বছরে একটি ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের জন্য Google এর প্রচেষ্টা ছিল দেখার মত। যেখানে আমরা দেখেছি, Google Talk, Google Hangouts, Google+ Allo সহ আরো অনেক মেসেজিং সল্যুশন নিয়ে এসেছিল যার কোনোটায় শেষ পর্যন্ত স্ট্যাবল হতে পারেনি। তো, সেই ধারাবিকতায় 2020 সালের শুরুদিকে GSM এর RCS ইউনিভার্সাল প্রোফাইলকে এডপ্ট করে Android এর ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ Android Messages এর সাথে Chat Features নামে গ্লোবালি রোল আউট করতে শুরু করে Google. RCS কি? RCS এর ইতিহাস, RCS ব্যবহারে যেসব সুবিধা অসুবিধা। সবশেষে কিভাবে আপনি আপনার ফোনে RCS এর সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন এইসব কিছুই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের পুরো আর্টিকেলে। তো চলুন শুরু করা যাক-  

RCS কি?

RCS বা Rich Communication Services একটি প্রোটোকল বা কতগুলো স্ট্যান্ডার্ড যা ফোনের বিদ্যমান টেক্সট মেসেজিং এর লিমিটেশনগুলোকে ওভারকাম করে ডেডিকেটেড মেসেজিং অ্যাপগুলোর সব সুযোগ সুবিধা যাতে করে ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপেই ইমপ্লিমেন্ট করা যায়। এইভাবে চিন্তা করলে একদম সহজ হয়ে যায়, শুধু আপনার ফোনের নাম্বার দিয়েই বাড়তি কোনো অ্যাপে একাউন্ট খোলা ব্যতিত ডেডিকেটেড মেসেজিং অ্যাপগুলোর অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা যদি ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপেই(এখানে Google এর Message অ্যাপ) উপভোগ করা যায়  তাহলে বিষয়টা কেমন হয়? এক্সাক্টলি এটায় RCS। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে RCS এর মাধ্যমে চ্যাট করতে লাগে না আলাদা টাকা যা আপনাকে আপনার অপারেটর প্রতিটি মেসেজের জন্য চার্জ করে থাকে। SMS চার্জ না লাগলেও RCS এর জন্য লাগবে লাগবে ডাটা কানেকশন। যেখানে সেন্ডার এবং রিসিভারের উভয়েরই ডাটা কানেকশন অন থাকা লাগবে। যদি কোনো কারণে RCS হিসেবে টেক্সট মেসেজ সেন্ড হতে না পারে তাহলে রেগুলার টেক্সট মেসেজে ফলব্যাক করবে।

RCS এর ইতিহাস
এটি সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে GSM দ্বারা গৃহীত হয় কিন্তু এরপর মেলাদিন গেলেও তেমন ট্র্যাকশন পায়নি RCS স্ট্যান্ডার্ড। আলাদা আলদাভাবে এমেরিকাতে কয়েকটি ক্যারিয়ার নিজেদের মত করে RCS চালু করলেও ইন্টার-অপারেবিলিটির অভাবে মাঠেই মারা যায়। ২০১৫ সালে Jibe Mobile নামে একটি কোম্পানি RCS কে ফ্যাসিলেট করার জন্য অনেকটা সার্ভিস হাবের মত গঠিত হয়। বিভিন্ন মোবাইল ক্যারিয়ার/অপারেটর’রা যাতে RCS ইমপ্লিমেন্টশন নিয়ে ঝামেলায় না পড়ে তাই RCS এর জন্য যাবতীয় ব্যাকএন্ড সাপোর্ট দেওয়ায় Jibe Mobile এর মূল লক্ষ্য। আবার ইন্টার-অপারেবিলিটির সমস্যা দূর করার জন্য GSMA ২০১৯ সালে অপারেটর নিয়ে বসে RCS এর কোর ফিচারগুলো নিয়ে Universal Profile নামে নতুন স্ট্যান্ডার্ডের ঘোষনা দেয়। এর ফলে বিভিন্ন অপারেটরের মধ্যে RCS এর স্মুথ অপারেশনও নিশ্চিত হয়ে যায়। আবার একই বছরে Google কিনে নেয় Jibe Mobile কে। তারপর Google RCS কে এককভাবে প্যাট্রোনাইজ করতে শুরু করে। রেগুলার টেক্সট মেসেজিং কে RCS দিয়ে রিপ্লেস করার পথটি একদম বন্ধুর নয়। কারণ এইখানে অনেকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সারা পৃথিবীতে মেজর মোবাইল অপারেটরকে রাজি করানো এবং তারপর এন্ড্রয়েড ফোন ম্যানুফেকচারকে চাপ সৃষ্টি করে ডিফট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে Google এর Message দেওয়া অনেক লম্বা প্রসেস। এইসব কিছু ম্যানেজ করে ২০১৯ সালে কিছুদেশের জন্য এবং ২০২০ সালে গ্লোবালি RCS রোল আউট করে।

বর্তমানে RCS চ্যাটে যেসব ফিচার পাওয়া যাচ্ছে-

যেহেতু RCS এখনও ডেভেলোপমেন্ট ফেইজে আছে। তাই ফুল প্লেজেড মেসেজিং অ্যাপগুলো অনেক সুবিধায় এখনো সম্পূর্ণরুপে ইনকরপোরেট করা যায়নি। তবে যে বেসিক ফিচারগুলো পাওয়া যাবে যেগুলো হচ্ছে। 

  • সেন্ট, ডেলিভার্ড, রিড স্ট্যাটাস।
  • টাইপিং ইন্ডিকেটর, মেসেজ প্রতি রিয়েকশন।
  • ১০০MB সর্বোচ্চ লিমিটে রিচ মিডিয়া শেয়ারিং। 
  • এঙ্ক্রিপ্টেড মেসেজ গ্রুপ চ্যাট। 
  • লোকেশন শেয়ারিং। 
  • ওয়েব ইন্টারফেসসহ আরো অনেক কিছু। 

এইবার আসা যাক RCS যেসব ফিচার পাওয়া যাবে না বা  RCS এর অসুবিধা- 

  • অডিও/ভিডিও কলের সুবিধা নেই। 
  • ইন-লাইন রিপ্লাই এখনো দেওয়া হয়নি।
  • ডেক্সটপ, ট্যাবলেটের আলাদাভাবে ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • iPhone ব্যবহারীদের সাথে RCS চ্যাট করা যাবে না।
  • RCS চ্যাট ইউজারদের একসাথে ট্র্যাক করা যায় না। 


আপনার ফোনে RCS চালু করবেন যেভাবে-

আপনার ফোনের এন্ড্রয়েড ভার্সন 6.0 এর উপরে হতে হবে। অন্যদিকে আমাদের দেশের সব ক্যারিয়ারেই RCS সাপোর্ট রয়েছে। কিন্তু RCS চ্যাট উপভোগ করতে চাইলে কয়েকটি সিম্পল স্টেপ ফলো করতে হবে। প্রথমত, আপনার ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপকে পরিবর্তন করে Message( by Google) দিতে হবে। যদিও অনেক ফোনই বর্তমানে ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে Google এর Message অ্যাপকেই আউট অফ দ্য বক্স পাওয়া যাবে। যদি তা না হয় তাহলে দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ এই লিংক থেকেই Play Store থেকে ডাউনলোড করা যাবে। তারপর ডানপাশে কর্নারের থ্রি ডট মেনু থেকে Settings > General > Chat Features > Enable chat features এ অন করে দিতে হবে যদি RCS আগে থেকে অফ থাকে। তারপর ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করে নিতে হবে। যদি Status: Connected দেখায় তাহলে ইতিমধ্যই আপনার ফোনে RCS চালু রয়েছে। 

এরপরের যে প্রশ্নটি উদিত হয় সেটি হচ্ছে রিসিপিয়েন্ট RCS এনাবেল্ড কিনা তা জানবেন কি করে? মজার ব্যাপার হচ্ছে এই আর্টিকেলে এতক্ষন এত এত বার RCS RCS করলেও Google Message অ্যাপে RCS নামে কিছু পাওয়া যাবে না। বরঞ্চ Google রেগুলার টেক্সট মেসেজিংকে Text এবং RCS কে শুধু Chat দিয়েই নামকরণ করেছে। ফলে যার সাথে RCS Chat করতে চান সে যদি RCS এনাবেল্ড হয় তাহলে Chatting with XY বা মেসেজ বক্সের ব্যাক গ্রাউন্ডে Chat লিখা থাকবে। তাছাড়াও সেন্ড বাটনের সাথে একটি লক আইকনও থাকবে যা রেগুলার টেক্সট মেসেজিং এ দেখা যায় না।

Share This Article

Search