২০১৬ সালের শেষের দিকের কথা,অগাস্ট মাসে টেক জায়েন্ট গুগল নিয়ে আসে তাঁদের প্রথম ভিডিও কলিং অ্যাপ “Google Duo”. শুধু কলিং নির্ভর অর্থাৎ ভয়েস অথবা ভিডিও ভিত্তিক অ্যাপটি চালু করে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের ফেইসটাইমের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এপলের ফেইসটাইম শুধুমাত্র আইফোন ইউজারদের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও Google Duo এন্ড্রয়েড ও এপল উভয়ের জন্য এভাইলেবল।
বর্তমানে অনেক এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনেই প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ হিসেবে “Google Duo” চলে আসে। কিন্তু এরপর আমরা অনেকে অলসতা বশত এই অ্যাপ এর বিস্তারিত ঘেঁটে দেখি না। না দেখারও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা অনেকগুলো সোশাল মেসেজিং অ্যাপ থেকেই আমাদের চাহিদামত সবটুকু পাচ্ছি যা কারণে আমরা অন্য বিকল্পের চিন্তা করি না। অন্যদিকে গুগল তাঁদের এই অ্যাপ নিয়ে খুব বেশি মার্কেটিং করে না বলে মনে হয়েছে যার ফলে অনেকের কাছে এর বিস্তারিত অজানা রয়ে গেছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করব Google Duo এর খুঁটিনাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে সাথেও বর্তমানে রাজত্ব করা সোশাল মেসেসিং অ্যাপ মেসেঞ্জার ও ওয়াটসঅ্যাপ এর সাথে দৌড়ে Google Duo ঠিক কতটুকু এগিয়ে।
অ্যাপ ওভারভিউ
এই অ্যাপ আমার ভাল লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর সিম্পলিসিটি। Google Duo এর মেইন পারসাস হচ্ছে ভিডিও বা অডিও কল করা তাই গুগল এর ইউজার ইন্টারফেসটি এমনভাবে ডিজাইন করেছে যাতে যথা সম্ভব কম সময়ে ভিডিও বা অডিও কল করা যায়। অ্যাপে প্রবেশ করে সহজেই কোনো Duo ইউজারকে ভিডিও অথবা অডিও কল করা যাবে। এই অ্যাপট মূলত কলিং এর জন্য বানানো সেটা হোক অডিও অথবা ভিডিও। অর্থাৎ টিপিক্যাল মেসেজিং অ্যাপগুলোর মত মেসেজিং ও কলিং একই সাথে করা যাবে না এই অ্যাপ দিয়ে। কিন্তু চাইলেই ছবি,ভয়েস মেসেজ, শর্ট ভিডিও ও শর্ট নোটস পাঠানো যাবে। এছাড়া কিছু ইমোজি প্রিসেট করা রয়েছে ঐগুলো ইনস্ট্যান্ট পাঠানো যাবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাইলে ঐসব মেসেজ ডিলেট করে দিলে তা উভয় পাশ থেকেই একসাথে ডিলেট হয়ে যাবে। সব কিছুর হিস্টোরিও সেভ থাকবে অ্যাপেই এবং খুব সহজেই এসব হিস্টোরি ডিলেট করে দেওয়া যাবে। এছাড়া বেশি যোগাযোগ করা হয় এমন কয়েকজনের কন্টাক হেড একদম শুরুতেই থাকবে যাতে খুঁজে বের করা ছাড়া তাড়াতাড়ি কল দেওয়া যায় । যদি নতুন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এই স্লট গুলো প্রথমে খালি থাকবে। ওহ, একটি কথা বলায় হয়নি, Google Duo ব্যবহার করতেই আপনাকে অবশ্যই একটি ফোন নাম্বার লাগবে যেটা আপনাকে সাইন আপ করার সময়ই দিতে হবে। এছাড়া ইমেইল দিয়ে ডেক্সটপে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ছাড়ায় ব্রাউজারের ফোনের সব ফিচারসহ ব্যবহার করতে পারবেন। এর জন্য যে ইমেইল দিয়ে Google Duo একাউন্ট খোলা হয়েছে সেই মেইলটি ব্রাউজারে সাইন ইন করা থাকতে হবে। শুধু পার্সন টু পার্সন ছাড়াও গ্রুপ ডিডিও কল সাপোর্ট করে এতে। সর্বোচ্চ ৩২ জন একসাথে গ্রুপ ভিডিও কলে কথা বলতে পারবে। মোটকথা এটি একটি ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে কথা বলার জন্য দারুণ একটি অ্যাপ বলা যায়।
এন্ড্রয়েড লিঙ্ক – Play Store
আইওএস লিঙ্ক- App Store
কয়েকটি ইন্টারেস্টিং ফিচার
নক নক-
আপনাকে কেউ ভিডিও কল দিলে আপনি কল রিসিভ করার আগে থেকেই অপর প্রান্তের মানুষকে দেখতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে উনি দেখতে পারবে না যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি কল রিসিভ না করেন। চাইলে এই ফিচার অফ করে রাখা যাবে।
লো লাইট
আপনি যদি তুলনামূলক কম আলোতেও কথা বলেন অপর প্রান্তে আপনাকে চাইলে স্পষ্ট দেখতে পারবে। লো লাইট ফিচারটি অন থাকলে। এইক্ষেত্রে শুধু আর্টিফিশিয়ালি ফেইসের ব্রাইনেটস বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফিচারটি ভিডিও কলে থাকা অবস্থা অন/অফ করা যাবে।
প্রোট্রেট মোড
এটাও খুব হ্যান্ডি একটা ফিচার। এটা অন করে দিলে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে যাবে অপরপ্রান্তে। যদি আপনার অগোছালো থাকে ব্যাকগ্রাউন্ড তাহলে এটি কাজে দিবে।
ডিরেক্টলি ভয়েস মেসেজ
যদি কেউ কল রিসিভ না করে তাহলে ঐখান থেকেই সাথেই সাথে ভয়েস মেসেজ রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। এই কাজটা অন্য মেসেজিং অ্যাপে করার জন্য নর্মালি চ্যাট থ্রেডে ব্যাক করে করতে হয় কিন্তু এইখানে ইমিডিয়েটলি অপশন দেওয়া হচ্ছে।
অন্যান্য
বর্তমানে অন্যতম ট্রেন্ডিং ফিচার স্ক্রিন শেয়ার করার সুবিধাও রয়েছে। ভিডিও কলের সময় অনেকগুলো ইন্টারেস্টিং AR ফিল্টারস ও ইফেক্টস ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া ডুডল, ডাটা সেইভিং মোড, কাউকে ব্লক করার সুবিধা ও নতুন কাউকে Duo’তে ইনভাইটেশন জানানোর সুবিধা তো রয়েছেই।
ভয়েস ও ভিডিও কোয়ালিটি
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুরো আর্টিকেলের। ইতিমধ্যে আমরা কমবেশি সবাই মেসেঞ্জার,ওয়াটসঅ্যাপ ও ক্ষেত্রবিশেষে স্কাইপ ব্যবহার করতেছি। তো কেন আমরা আলাদা করে Google Duo ব্যবহার করব? এই ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে আমিও শুধু টেস্ট পারপাসে ব্যবহার করে দেখতে চেয়েছিলাম গুগলের এই অ্যাপ কেমন। এবং এরপর থেকেই নিয়মিত ভাবেই ব্যবহার করছি। এক কথায় এদের ভিডিও কোয়ালিটি অন্যসব কলিং অ্যাপকে বিট করার মত। ভিডিও কলের সময় 720p এ স্ট্রিম হয়। এই ক্ষেত্রে হুটহাট করে মেসেঞ্জারের মত ভিডিও ফ্রিজ হয়ে যাওয়া অথবা ব্লারড হয়ে যাওয়ার মত ইস্যুর মুখোমুখি হয়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ডিলেও খুব কম মানে এটলিস্ট নোটিশ করার মত না। অন্যদিকে ভয়েস কোয়ালিটিও ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। ডিস্টর্সন ও তেমন দেখা যায়নি। মোট কথা মেসেঞ্জার বা ওয়াটস অ্যাপে দীর্ঘক্ষন কথা বলার পর অনেক সময় লেটেন্সি বা ডিলে চলে আসে। Google Duo যা আমি এতদিন ব্যবহারে নোটিশ করিনি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছে, ভিডিও কলের সময় কোন কারণে নেট স্লো হলে ভিডিও কোয়ালিটি কিছুটা কমিয়ে দিয়ে বা ডিডিও একবারে অফ দিয়ে অডিও কলকে একদম স্মুথ করে রাখা হয় যাতে কমিনিকেশন আনইন্টাররাপ্টেড থাকে। এছাড়া কোনো কারণে আপনার নেট ওয়ার্ক স্লো হয়ে গেলে তা পপ আপের মাধ্যমে জানান দেওয়া হয়।
সিকিউরিটি
সিকিউরিটির ক্ষেত্রেও কোনো কম্প্রোমাইজ থাকছে নাহ। অর্থাৎ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন রয়েছে। এই এএন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন কাজ করে ডিরেক্ট ডিভাইস টু ডিভাইস যা বাই ডিফল্ট শুরু থেকেই অন থাকবে। মেসেজ ও কল দুইটি সেবাই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন আওতায় রয়েছে।