মিডরেঞ্জ স্মার্টফোনের মার্কেটে এখন নচওয়ালা ফোনের খেলা চলছে। ডুয়াল ক্যামেরা,নচওয়ালা ডিস্প্লে,ক্যামেরার ঘোলা ইফেক্ট আই মিন বোকেহ ইফেক্ট ওয়েল Known কোম্পানিগুলোর কাছে যেন বাম হাতের খেল। তাই মিডরেঞ্জ স্মার্টফোনের বাজারে ব্রান্ডগুলোর মধ্যে ভালই কম্পিটিশন চলছে। ঝকঝকা গ্লাস বডিতে ডুয়াল ক্যামেরার ভার্টিক্যাল পজিশনিং আর সামনে নাকের মত নচওয়ালা ডিসাইনের ফোনে যেন এখন ট্রেন্ডি ব্যাপার। যাইহোক,সম্প্রতি রিলিজ হয় Huawei Nova 3e aka P20 lite.
চায়না এবং বাংলাদেশে এই ফোনটি Nova 3e হিসেবে পরিচিতি পেলেও সারা দুনিয়ার কাছে এটি P20 lite নামেই পরিচিত।
গরিবের রবিনহুডের মত এই ফোনটি যেন আমার কাছে গরিবের আইফোন এক্সই মনে হয়েছে।
চলুন দেখে নেই ফোনটি আসলেই প্রাইসের দিক থেকে সেরা কিনা? আমি জাহিদ ওয়ালকাম টু পিসিবি বিডি চ্যানেল।
ডিজাইন এবং ডিসপ্লে
ক্লেইন ব্লু, সাকুরা পিংক, প্লাটিনাম গোল্ড আর মিডনাইট ব্লাক এই চারটি কালার ভ্যারিয়েন্টের মদ্ধে আমাদের রিভিউ ইউনিটটি ছিল মিডনাইট ব্লাক।
কালো রঙ-এর গ্লাস বডি ডিসপ্লে ফোনটির পিছনে ভার্টিকালি এলাইন করা ডুয়াল ক্যামেরা এর একটু নিচে একদম পার্ফেক্ট লোকেশনে ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর।
যদিও ফোনটি ফিংগারপ্রিন্ট ম্যাগনেট।
ডানদিকে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম রকার, নিচে ইউএসবি টাইপ সি, হেডফোন জ্যাক এবং স্পিকার। ১৪৮.৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ৭১.২ মিলিমিটার চওড়া ফোনটি মাত্র ৭.৪ মিলিমিটার পাতলা।
ওজনে ফোনটি মাত্র ১৪৫ গ্রাম প্রায়। যা আসলেই অনেক হালকা বলতে গেলে। আর ফোনটি হালকা হলেও এর প্রিমিয়াম ফিনিশ আসলেই প্রসংসা করার মত।
মাঝখানে মেটাল হাউসিং এর দুইপাশেই গ্লাস ডিসাইনের সামনে 5.84 inch এর আইপিএস এলসিডি ডিস্প্লে। (১৯:৯ রেশিওর) ডিস্প্লের রেজুলেশন ১০৮০*২২৮০ ডিস্প্লে ডেন্সিটি ৪৩২ পিপিয়াই(ppi)।
বলতে গেলে ফোনটির ডিস্প্লে FHD। ডিস্প্লেটি শার্প ইমেজ এবং টেক্সট এর জন্য এনাফ। ডিস্প্লেটি খুব ব্রাইট না হলেও সানলাইটে ইজিলি রিডেবল। এর কালার একুরেসি যথেস্ট ভাল এবং প্রাইসিং এর দিক থেকে ডিসপ্লেটি মানানসই লেগেছে।
এছাড়া ডিস্প্লেটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট হওয়াতে ব্যাটারির উপরে তেমন একটা চাপ পড়বে না। ব্যাটারি নিয়ে পরে কথা বলা হবে যদিও।
উপরের দিকে একটা নচ আছে যাতে ফ্রন্ট স্পিকার, সেন্সরস,নোটিফিকেশন লাইট এবং ক্যামেরা আছে।
নচ দেখে অনেকেই ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করতে পারেন, ফুল স্ক্রিনে ভিডিও দেখলে কাটা পড়বে না?
না আসলে তেমন না। ভিডিও দেখার সময় ল্যান্ডস্কেপ ফরম্যাটে নিলেই নচের পাশে ব্ল্যাক বার চলে আসবে তাই ফুল স্ক্রিনে ভিডিও দেখায় কোন প্রবলেম হবে না।
হার্ডওয়্যার,সফটওয়্যার এবং পারফর্মেন্স
হার্ডোওয়্যার হিসেবে ফোনটিতে হুয়াওয়ের নিজেস্ব হাইসিলিকন কিরিন ৬৫৯ প্রসেসর ব্যাবহার করা হয়েছে যা হুয়াওয়ে নোভা ২ তেও ছিল। যা প্রায় স্নাপড্রাগন ৬২৫ এর কাছাকাছি পার্ফামেন্স দিতে সক্ষম।
অক্টা কোর প্রসেসরের চারটি কোর ২.৩৬ গিগাহার্জ এবং চারটি কোর ১.৭ গিগাহার্জে ক্লক করা। মিড রেঞ্জের ফোন হিসেবে প্রসেসরটি আপনাকে যথেস্ট প্রসেসিং পাওয়ার দিতে সক্ষম।
ফোনটির র্যাম হিসেবে থাকছে ৪ জিবি র্যাম এবং ৩২ অথবা ৬৪ জিবি স্টোরেজ সুবিধা। এছাড়া এক্সটার্নাল মাইক্রো এসডি সাপোর্ট আছে যা ২৫৬ জিবি স্টোররেজ বাড়ানোর সুবিধা।
আমাদের রিভিঊ ইউনিটটি ৬৪ জিবির ছিল।
এর জিপিউ হিসেবে আছে Mali-T830 MP2 যার সাহায্যে যে কোন গেম স্মুথলি খেলা সম্ভব। মর্ডান কম্ব্যাট ব্লাক আউট, এস্ফাল্ট ইত্যাদি গেমগুলো ট্রাই করে দেখা হয়েছে। সবগেমই ল্যাগফ্রীতে খেলা গেছে।
সফটওয়্যার সাপোর্ট হিসেবে থাকছে হুয়াওয়ের চিরপরিচিত ইমোশন ইউয়াই ৮.০ যা এন্ড্রোয়েড ৮.০ ওরিও এর উপরে বেসড করা। তাই আউট অফ দ্যা বক্স ওরিওর স্বাদ পাচ্ছেন। যথেস্ট ক্লিন এবং স্মুথ ওএস ইমোশন ইউয়াই।
ডে টু ডে ইউজে কোন ধরনের ল্যাগ ফিল হয় নি। একসাথে অনেকগুলো এপসে মাল্টিটাস্কিং এ কোন ল্যাগ দেখা যায় নি। তাই সফটওয়্যার এক্সপেরিএয়ন্স নিয়ে কোন ধরনের মাথাব্যাথার কারন নেই।
ব্যাটারি ব্যাকআপ
ব্যাটারি হিসেবে থাকছে ৩০০০ মিলিএম্পের লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। যা এই দামের ফোনের হিসেবে আসলেই কম। তবে নরমাল ইউজে একদিনের মত ব্যাক্যাপ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু হেভি ইউসেজে একদিনের ব্যাটারি ব্যাকআপ আশা করাটা বোকামি।
অডিও
ফোনের নিচের দিকে দেয়া মনো স্পিকারটি যথেস্ট লাউড এন্ড ক্লিয়ার। তবে গেমিং বা ভিডিও দেখার সময় আঙ্গুলের দ্বারা ব্লক হবার সম্ভাবনা রয়েছে।।
ক্যামেরা
এইবার আসি আসল প্রসঙ্গে। মিড রেঞ্জ স্মার্টফোন হিসেবে এর ক্যামেরা আসলেই প্রমিসিং। কিন্তু যারা খুব হাই এক্সপেক্টেশন করছেন তারা হয়তো খুশি নাও হতে পারেন। ফোনটির রিয়ার ডুয়াল ক্যামেরার একটি ১৬ মেগাপিক্সেল f2.2 এপার্চারের এবং অন্যটি ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সর।
ক্যামেরা এপে কোন ধরনের কমতি পাবেন না। সব ধরনের ইউসুয়াল(usual) ফিচার্স পাবেন যেমন, শাটার স্পিড, এক্সপোসার,আইএসও, ইভি ইত্যাদি।
ছবির কোয়ালিটি বলতে কালার রিপ্রোডাকশন যথেস্ট ভাল ভাইব্রেন্ট এবং ওয়ার্ম, কোন ধরনের হাই সেচুরেশনের ব্যাপার নেই, শার্পনেস আর ডিটেইল যথেস্ট ছিল। তবে হাইলি ইম্প্রেসিভ বলা যায় না। ডেলাইটে ভাল ছবি পাওয়া গেলেও লো লাইট ছবি আহামরি না হলেও চলার মত ছিল। দাম হিসেবে অলমোস্ট ঠিকঠাক ক্যামেরা বলা যাবে এর রিয়ার ক্যামেরা কে।
এছাড়া বোকেহ ইফেক্ট গুড এনাফ পোট্রেট টাইপ ছবির জন্য। এজ ডিটেকশন যথেষ্ট ভাল ছিল।
ফোনটিতে কোন 4K রেকর্ডিং সাপোর্ট নেই। এছাড়া কোন ধরনের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার স্ট্যাবিলাইজেশন না থাকায় ভিডিও হবে শেকি। তবে ভিডিও আউটপুট যথেষ্ট ভাল ছিল।
সেলফিস আই মিন সেলফির দুনিয়ায় ফ্রন্ট ক্যামেরার ইম্পর্ট্যান্স বেশি আর তার জন্য এর ফ্রন্ট ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেলের যা f2.0 এপার্চারের। মোটামুটি সব ধরনের লাইটের সাথে এর সেলফি আউটপুট যথেস্ট ভাল ছিল। সেলফি সেন্ট্রিক মানুষদের জন্য ফোনটি ভাল একটি অপশন হতে পারে।
ফ্রন্ট ক্যামেরাটি যথেস্ট ন্যাচেরাল কালার প্রোডিউস করে এবং যথেষ্ট ভাল ডিটেইল হোল্ড করে। এছাড়া এর বোকেহ মুডও ভাল ছিল ঘোলাটে সেলফির জন্য।
অন্যান্য
এছাড়া কানেকটিভিটি বলতে ডুয়াল সিম সাপোর্টেড যার জন্য হাইব্রিড সিম স্লট আছে, ৪জি সাপোর্ট এভেইলেবল, প্রয়োজনীয় সমস্ত সেন্সরস এতে আছে, যা এই দামে পাওয়াটা স্বাভাবিক। এছাড়া ফেস রিকনিশন ফিচার আছে যা যথেষ্ট ফাস্ট এবং একুরেট ছিল।
ফাইনাল কথা
ভিডিও শেষে আমার মতামত, আইফোনের মত বডি ডিসাইনে এন্ডয়েড এক্সপেরিয়েন্স আপনাকে হতাশ করবে না। স্মল(small) ফর্ম ফ্যাকটরের হালকা ফোনটি যে কোন হাতেই ভাল মানাবে। আর গ্লসি ডিজাইন আসলেই নজর কাড়ার মত। তবে এর ফ্রন্ট আর ব্যাকে কোন ধরনের প্রোটেকশন ব্যাবহার করা হয়েছে তার কোন ধরনের ক্লিয়ার ইনফরমেশন পেলাম না। আর গ্লাস বডি হওয়ায় প্রোটেক্টিভ কেস ব্যাবহার একদম ফরজ বলতে গেলে। যদি আপনি ফোনের সুন্দর লুককে ধরে রাখতে চান।
এছাড়া ব্যাটারি ব্যাকআপ আরো বেশি হলে ভাল হত।
আর ক্যামেরার ক্ষেত্রে স্টেবিলাইজারটা দরকার ছিল। OIS না হলেও EIS থাকলেও হত।
তবে ফেস রিকনিশন ফিচার্টি আসলেই ভাল ছিল।
তবে ২৭ হাজার টাকায় Nova 3e ফিচার, ডিজাইন এবং কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাল । এই ধরনের দামের নচড ফোনগুলোর মধ্যে এই ফোনটি লিডিং পজিশনে থাকার মত একটি ফোন।
কয়েকদিন আগে করা হুয়াওয়ে Y9 এর রিভিউটি দেখে আসতে পারেন এখানে ক্লিক করে।